হযরত
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ) এর জীবনী
হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান (রাঃ) ছিলেন
রাসুল সাঃ এর সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম সাহাবি এবং একজন জলীল কদর সাহাবী। তিনি ৬৩০
খ্রীঃ ইসলাম গ্রহণ করেন।তিনি তার
পিতা আবু সুফিয়ান মক্কা বিজয়ের বছর ইসলাম গ্রহণ করেন। ওয়াকেদি বলেন, হুদায়াবিয়ার
সন্ধির পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তবে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। পরবর্তী সময়ে
মক্কা বিজয়ের সময় প্রকাশ করেছিলেন।যদিও ঐতিহাসিক গণ তার শাসনব্যবস্থা নিয়ে
সমালোচনা করেছেন।যেহেতু তিনি একজন মহান সাহাবি ছিলেন তাই তার সমালোচনা না করাই আমাদের জন্য উত্তম।তার শাসনব্যবস্থা
সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
জন্ম ও পরিচয়ঃ
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান ৬০২ সালের ২৯ এপ্রিল জন্ম
গ্রহণ করেন। কারো মতে ৬০৮
খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছেন। রাসুল (সা.)-এর হিজরতের সময় তাঁর
বয়স ছিল ১৮ বছর। তাঁর বংশ পঞ্চম পুরুষে এসে রাসুল (সা.)-এর বংশের সঙ্গে মিলে যায়।
তিনি উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবিবা (রা.)-এর সহোদর ভাই ছিলেন।
রাসুল সাঃ এর সাহাবিঃ
মুয়াবিয়া
(রা.) আল্লাহপ্রদত্ত অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। রাসুল
(সা.)-এর কাছে তিনি এতই নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন যে তিনি তাঁকে ওহি লেখার
দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ফকিহ সাহাবিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। রাসুল (সা.) থেকে তাঁর
সূত্রে ১৬৩টি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সর্বপ্রথম তিনিই ইসলামের ইতিহাস রচনা করেছেন।
হজরত উম্মে
হারাম (রা.) বলেন, 'আমি রাসুল
(সা.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের সর্বপ্রথম সামুদ্রিক
অভিযানে অংশগ্রহণকারী বাহিনীর জন্য জান্নাত অবধারিত'।
(সহিহ
বোখারি, হা. ২৯২৪) ।
এ হাদিসের
ব্যাখ্যায় মুহাল্লাব (রহ.) বলেন, 'হাদিসটিতে
হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। কেননা হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-ই ছিলেন ওই
বাহিনীর সিপাহসালার'।
(ফাতহুল বারী : ৬/১০২)।
হজরত আবদুর
রহমান ইবনে আবি উমায়রা (রা.) বলেন, 'রাসুল
(সা.) মুয়াবিয়ার জন্য এ দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! মুয়াবিয়াকে
সঠিক পথে পরিচালনা করুন ও তাঁকে পথপ্রদর্শক হিসেবে কবুল করুন'।
(তিরমিজি, হা.
৩৮৪২) ।
একবার
মুয়াবিয়া (রা.) রাসুল (সা.)-এর অজুতে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন, তখন রাসুল (সা.) তাঁকে বললেন, 'হে
মুয়াবিয়া, যদি তোমাকে আমির নিযুক্ত করা হয়, তাহলে আল্লাহকে ভয় করবে এবং ইনসাফ করবে।' মুয়াবিয়া
(রা.) বলেন, 'সেদিন থেকেই আমার বিশ্বাস জন্মেছিল যে, এ কঠিন দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়বে'।
(মুসনাদে
আহমাদ হা. ১৬৯৩৩)।
হজরত ইবনে
আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, একদিন জিবরাঈল
(আ.) রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, 'হে মুহাম্মদ (সা.),
মুয়াবিয়াকে সদুপদেশ দিন, কেননা সে আল্লাহর
কিতাবের আমানতদার ও উত্তম আমানতদার'। (আল মুজামুল আওসাত, হা. ৩৯০২) ।
শাসক হিসেবে
মুয়াবিয়া (রাঃ) এর অবদানঃ
রাসুল সাঃ
এর সময় তাকে নাজরানের গভর্নর করেছিলেন।তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবে
পালন করেন।মুলত তার রাজনীতির সূচনা হয় হযরত ওমর রাঃ এর সময় সিরিয়ার শাসন কর্তা
হিসেবে নিয়োগের মাধ্যমে। হযরত উসমান (রাঃ) হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হযরত আলী (
রা ) এবং হযরত মুয়াবিয়া ( রা ) এর মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় । হযরত আলী ( রা )
এর সাথে সিফফিনের যুদ্ধে কুটনৈতিক বিজয়ের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা
করেন । ৬৬১ খ্রিষ্টাব্দে হযরত আলী ( এ ) এর । শাহাদতের পর ইমাম হাসানকে পরাজিত করে মুয়াবিয়া
( রা ) সিরিয়ার দামেস্কে নানা স্থাপনা করে খোলাফায়ে রাশেদীনের ধ্বংসস্তুপের উপর
ইসলামি গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্রের সূচণা করেন , যা ইসলামের ইতিহাসে উমাইয়া বংশ নামে পরিচিত।
খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনঃ
অসাধারণ
নৈপুণ্যের কারণে হজরত ওমর (রা.) তাঁর খেলাফতকালে তাঁকে দামেস্কের আমির নিযুক্ত
করেছিলেন। হজরত ওসমান (রা.) তাঁকে পুরো শামের (সিরিয়ার) আমির নিযুক্ত করেছিলেন।
তাঁদের খেলাফতকালে মুয়াবিয়া (রা.) ইসলামের বহু যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে অনেক দেশ জয়
করেছিলেন।
খেলাফত আমলের কীর্তিঃ
হজরত
মুয়াবিয়া (রা.) চরম সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতে খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি
সব ফিতনা দমন করে শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনেন। পরিস্থিতি এমন হয় যে, মহিলারা রাতে তাদের ঘরের দরজা খুলে ঘুমাতেও ভয় করত না,
কোনো ব্যক্তি পথে পড়ে থাকা কারো জিনিস ছুঁয়ে দেখার সাহস পেত না।
তাঁর শাসনামলে সারা পৃথিবীতে কোনো মুসলমান ভিক্ষুক ছিল না। রাজ্যের অমুসলিম
নাগরিকদেরও শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম যোগাযোগের জন্য
ডাক বিভাগ চালু করেন এবং সরকারি দলিল-দস্তাবেজ সংরক্ষণের জন্য পৃথক বিভাগ চালু
করেন। তিনি মুসলিম বাহিনীকে সুশৃঙ্খল রূপ দেন ও ইসলামের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে
দেওয়ার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পর্তুগাল থেকে চীন পর্যন্ত এবং আফ্রিকা থেকে
ইউরোপ পর্যন্ত ৬৫ লাখ বর্গমাইল বিস্তৃত অঞ্চল তাঁর শাসনামলে ইসলামের পতাকাতলে চলে
আসে। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর খেলাফতের গুরুদায়িত্ব পালন করেন।
রাজ্য বিজয় ও মুয়াবিয়া (রাঃ)
মুয়াবিয়া
( রা ) নিজেও ছিলেন একজন সেনানায়ক এবং তার দ্বারা । পরিচালিত সেনানায়কগণ তাদের
রণকৌশলের মাধ্যমে হযরত ওমর ( রা) প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সম্রাজ্যের সীমানা পূর্ব ও
পশ্চিম দিকে বিস্তৃতি লাভ করে।
তিনি যেসব
এলাকা জয় করেন তা হলো।
মুয়াবিয়া
( রা ) তাঁর সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে অভিযান চালিয়ে যেসব এলাকা জয় ও বিদ্রোহ দমন
করেছিলেন।
সীমান্ত
উপজাতিদের দমন উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা করার পর পরই মুয়াবিয়া রাজ্যজয়ের পরিকল্পনা
গ্রহণ করেন । এর মূলে বাধাদানকারী ছিল সীমান্ত বিদ্রোহীরা । তিনি প্রথমে
আফগানিস্তান ও পারস্যের অধিকত অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে সীমান্ত উপজাতিদেরকে বশ্যতা
স্বীকারে বাধ্য করেন । ফলে সমাজে অভ্যন্তরীণ শান্তি স্থাপিত হয় ।
বুখারা , গজনী , কাবুল ,বলখ ও কান্দাহার দখলঃ
৬২২
খ্রিস্টাব্দে হীরাতে বিদ্রোহ দেখা দিলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হয়। এর দুবছর পর গজনী , বলখ কাবুল ও কান্দাহার প্রভুতি অঞ্চলে অনুরুপ অভিযান চালিয়ে
বিদ্রোহ দমন করা হয় এবং উমাইয়া প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় ৬৬৫ খিস্টাব্দে মসলিন
বাহিনী মুহালল্লাবের নেতৃত্বে সিন্ধু নদের তীর পর্যন্ত অগ্রসর হয় । ৬৭৪
খ্রিস্টাঙ্কে জিয়াদের এক পুত্র বুখারা দখল করেন। এরপর সমরখন্দ ও তিরমিজি উমাইয়া
খিলাফায়ে হস্তগত হয় । এভাবেই উমাইয়া সাম্রাজ্য পূর্বদিকে সমরখন্দ ও বুখারা এবং
দক্ষিণ দিকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে ।
পশ্চিমাঞ্চল বিজয়ঃ
উমাইয়া
বংশের প্রতিষ্ঠাতা মাবিয়ার শাসনামলে পূর্বদিকের ন্যায় পশ্চিম
রাজ্য
সম্প্রসারিত হয়েছিল যেমনঃ
উত্তর আফ্রিকা বিজয়
উমাইয়া
সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের অংশবিশেষ হল উত্তর আফ্রিকা । উত্তর আফ্রিকা বিজয়
মুয়াবিয়ার রাজত্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা । এ সময় আরববাসীগণ নীল নদের নিম্ন
উপত্যকা , মিশর , আধুনিক
লিবিয়া ও তিউনিসিয়াকে ইফ্রিকিয়া এবং বর্তমানে আলজেরিয়া ও মরোক্কোর মধ্যবর্তী
বিস্তৃত অঞ্চলকে আল মাগরিব নামে অভিহিত
করা হত ।
হযরত ওমরের
আমলে মুসলিম বাহিনী সর্বপ্রথম মিশর দখল করে এবং ইফ্রিকিয়াতে প্রবেশ করতে আরম্ভ
করে । হযরত ওসমান ( রা ) এর শাসনকালে আৱৰ সৈন্যগণ বার্কা পর্যন্ত আগ্রসর হন ।প্রাচীন
কার্থেজের অনতি দূরে বাইজান্টাইন সম্রাট গ্রিগরিয়াস মুসলমানদের নিকট পরাজিত হয়ে
তাদেরকে বাৰ্ষিক করদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন । এ ঘটনার পর মুসলমানগণ জাবিলা ও
বার্কা নামক স্থানে ছোট ছোট সৈনাদল রেখে দেশ থেকে চলে যান । কিন্তু রোমানগণ
পরিত্যক্ত অঞ্চলগুলো পুনরায় দখল করে । রোমানদের অত্যাচারে সেখানকার বার্কার
অধিবাসীগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে এবং পার্শ্বব্ততী মিশৱেৰ শাসন কর্তা আমরের সাহায্য
প্রার্থনা করে । আমর খলিফা মুয়াবিয়াকে এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি ১০ , ০০০ সৈনসহ উকবা বিন নাফিকে আফ্রিকায় প্রেরণ করেন । উক্ত সব
বাধা অতিক্রম করে ঐ দেশকে পুনরায় আরবদের শাসনাধীনে আনয়ন করেন । আমির আলী বলেছেন ,
উত্তর আফ্রিকার হিংস্র ও যুদ্ধ প্রিয় জাতিসমূহের সহিত সংসার্যে
আরবগণ যে অদমা সাহস ও অপ্রতিহত উদ্দীপন প্রদর্শন করে তা অন্য কোন দেশ বা জাতি করতে
পারে নি ।
কাইরোয়ান শহর প্রতিষ্ঠাঃ
৬৭০
খ্রিস্টাব্দে উকবা তিউনিসের দক্ষিণে কায়রোয়ান নামে একটি প্রসিদ্ধ সামরিক শহর
প্রতিষ্ঠা করেন । অবশেষে এ শহরটি আফ্রিকার রাজধানীতে পরিণত হয় । এরপর উকবা
ক্রমান্বয়ে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন এবং সমগ্র মাগরিব অবল দখল করে
আটলান্টিক সাগরের তীরে উপনীত হন ।
বিশাল
জলরাশি তাঁর অগ্রগতি রোধ করল । তিনি
আকাশের দিকে হস্তদ্বয় উত্তোলন করে আবেগের সাথে বলেছিলেন , “ হে আল্লাহ । । যদি এ বিশাল সমুদ্র আমার অন্তরায় না হতো ,
তাহলে আমি আরও দেশ জয় করতাম এবং তোমার ধর্ম ও নামের মহিমা প্রচার
করতাম।
কনস্টান্টিনোপল
অবরোধঃ
৬৬২
খ্রিস্টাব্দে মুয়াবিয়া (রঃ) আর্মেনিয়ার রোমানদেরকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে
আর্মেনিয়া দল করেন । এ ঘটনার পর তিনি আক্র ( Acre ) নামক স্থানে মুসলিম পোতাশ্রয় স্থাপন করেন এবং পরে এটি সুর ( টায়ার ) এ
স্থানান্তরিত করেন ।
মুয়াবিয়া (রঃ)
সিয়ায়ার গভর্নর থাকাকালে তিনি প্রায় এশিয়া মাইনরে বাইজান্টাইনদের সাথে যুদ্ব করেছিলেন
। খলিফা হওয়ার পর তাদের সাথে পুনরায়
শত্রতা আরম্ভ করেন।
৬৬৯ খ্রীঃ গ্রিকদের
রাজধানী কনস্টান্টিননোপালের বিরুদ্ধে নৌ ও স্থলবাহিনী প্রেরন্দ্র করেন । নৌবাহিনীর
নেতৃত্ব প্রদান যেন ফাদালা ইবনে উবায়েদ আল আনসারী। যুবরাজ ইয়াজিদকেও ফাদালার সাহায্যার্থে প্রেরণ
করা হয়। মুসলিম বাহিনি দীর্ঘদিন যাবৎ শহরটি অবরোধ করে রাখে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত
মুয়াবিয়ার কনস্টান্টিনোপল জয়ের স্বপ্ন ব্যার্থ হয়।
মুসলিম
বাহিনীর খাদ্যভাব, মহামারি , ইয়াজিদের অসুস্থতা , দুরত্ব এবং অন্যান্য কারনে এ
অভিযান সফল হয় নি । মুসলমানগণ শুধু কনস্টান্টিনোপলের নিকবর্তী সাইজিকাস দ্বীপটী
হস্তগত করেন। এ যুদে ইমাম হোসেন রাঃ অংশগ্রহন করেন।
এ যুদ্ধে
বীর অন্যতম সাহাবি ও পতাকাবাহী আবু আইয়ুব আল - আনসারী ( রা ) আমাশয়ে মৃত্যুবরণ
করেন । তাকে কনস্টান্টিনোপলের নগর প্রাকারের বহির্ভাগে সমাহিত করা হয় । এর কয়েক
বছর পর দ্বিতীয় নৌ অভিযান প্রেরণ করা হয় কর এ অভিযান সাত বছর ( ৬৭৪ - ৬৮০
খ্রিস্টাব্দ ) স্থায়ী ছিল । এজন্য এটাকে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধও বলা হয় । তবে এবারো
ব্যর্থ হয় । এ সময়ে রোডস , সিজিকাস ও
ক্রীট দ্বীপ সাময়িকভাবে বিজিত হয় ।
ইয়াজিদ
খলিফা হওয়ার পর কনস্টান্টিনোপল থেকে সৈন্যবাহিনী ফিরিয়ে আনা হয় ।
নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠাঃ
নৌবাহিনী
প্রতিষ্ঠা ও মুসলিম নৌবাহিনীর প্রথম নির্মাতা হিসেবে মুয়াবিয়া ( রা ) এর নাম
ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । তিনি শাসন ক্ষমতায় তৎকালীন গ্রিকদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করার জন্য প্রায় ৫০০ জাহাজসহ একটি নৌবহর প্রেরণ করেছিলেন । এ নৌবহরের সাহায্যে তিনি
ভূমধ্যসাগরের কয়েকটি দ্বীপ দখল করতে সমর্থ হন । আব্বাসীয় শাসনামলে এসে এ
নৌবাহিনী বিশাল শক্তিশালী হয়েছিল ।
ইয়াজিদকে খলিফা বানানোর কারণঃ
হজরত
মুয়াবিয়া (রা.) যখন জীবন সায়াহ্নে পৌঁছলেন, বিশিষ্ট
সাহাবি হজরত মুগিরা ইবনে শু'বা (রা.) যিনি বাইআতে রিদ্ওয়ানে
রাসুল (সা.)-এর সঙ্গী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তিনি
মুয়াবিয়া (রা.)-কে পরামর্শ দিলেন যে, হজরত ওসমান (রা.)-এর
শাহাদাতের পর মুসলমানদের যে করুণ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, তা
আপনার সামনেই রয়েছে। তাই আমার পরামর্শ হলো, সব প্রাদেশিক
গভর্নরকে ডেকে আপনার জীবদ্দশায়ই ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত নিয়ে উম্মতকে রক্তক্ষয়ী
হাঙ্গামা থেকে রক্ষা করুন। এ পরামর্শ আনুযায়ী হজরত মুয়াবিয়া (রা.) সব গভর্নরের
কাছে এ মর্মে চিঠি প্রেরণ করলেন যে, আমি জীবন সায়াহ্নে পৌঁছে
গেছি, তাই চাচ্ছি যে, মুসলমানদের
কল্যাণে আমার জীবদ্দশায়ই একজন খলিফা নিযুক্ত করে যাব। অতএব তোমরা নিজ নিজ পরামর্শ
ও তোমাদের পরামর্শদাতাদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের পরামর্শও লিখে পাঠাও।
এতে বেশির
ভাগ আমিরই ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার পক্ষে রায় দিলেন। কুফা, বসরা, শাম ও মিসরের লোকেরা ইয়াজিদের
হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে নিল। বাকি মক্কা-মদিনার গুরুত্ব বিবেচনা করে মুয়াবিয়া (রা.)
স্বয়ং হিজাযে উপস্থিত হয়ে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
এতে মক্কা-মদিনার জনসাধারণও ইয়াজিদের বাইয়াত গ্রহণ করে নিলেন। আর হজরত আব্দুল্লাহ
ইবনে ওমর (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.), হুসাইন ইবনে আলী
(রা.). ও আব্দুর রহমান ইবনে আবী বকর (রা.)- এ পাঁচজনের ব্যাপারে খেলাফত মেনে না
নেওয়ার শঙ্কা থাকায় মুয়াবিয়া (রা.) পৃথক পৃথক প্রত্যেকের সঙ্গে মিলিত হয়ে পরামর্শ
করেন। এতে প্রথমোক্ত চারজন এ বলে মেনে নিলেন যে, সব লোক
স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শুধু হজরত আবদুর রহমান ইবনে
আবী বকর (রা.) এতে দ্বিমত পোষণ করলেন। এভাবে বেশির ভাগ উম্মতের রায় মতে ইয়াজিদের
খেলাফত নিশ্চিত হলো। তাই মুয়াবিয়া (রা.)-এর ইন্তেকালের পর ইয়াজিদ থেকে যেসব অন্যায়
কাজ সংঘটিত হয়েছিল, তার দায়ভার মুয়াবিয়া (রা.)-এর ওপর
বর্তাবে না, বরং ইয়াজিদের অন্যায়ের জন্য তিনি নিজেই দায়ী-
(তারিখে ইবনুল আসীর ৩/৯৭-১০০) ।
শেষ কথাঃ
উপরিউক্ত আলোচনার
পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে , হযরত
মুয়াবিয়া ( রা ) যেভাবেই ক্ষমতা দখল করেন
না কেন , তার যোগ্যতা সম্বন্ধে কোন দ্বিমত নেই । তিনি
নিঃসন্দেহে একজন অভিজ্ঞ শাসক ও সুনিপুণ কূটনীতিবিদ ছিলেন । সময় ও অবস্থার
সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত । এ সময় সাম্রাজ্য সিন্ধু নদের তীর
থেকে আটলান্টিক পর্যন্ত এক বিশালতা টিকিয়ে রেখে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করতে
সক্ষম হয়েছিলেন । তাই ঐতিহাসিক পি . কে . বলেছেন , “ এরূপে মুয়াবিয়া ( রা ) কেবল নতুন এক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতাই ছিলেন না ,
ওমরের পরে খিলাফতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিজেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন ।
Comments
Post a Comment